শুক্রবার আসলেই ২ শতাধিক ছিন্নমূলকে খিচুড়ি খাওয়ান চা-বিক্রেতা ফারুক

প্রতি শুক্রবার ২ শতাধিক ছিন্নমূলের মুখে আহার তুলে দেন রাজশাহীর এক চা-বিক্রেতা। নাম তার ফারুক হোসেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনটি এলেই ফারুকের ছোট্ট ভ্রাম্যমাণ টি-স্টলে ভিড় জমায় ছিন্নমূল ক্ষুধার্তরা। ছিন্নমূলদের ক্ষুধা মেটাতে এক থেকে দেড় মণ চালের খিচুড়ি রান্না করেন ফারুক। তারা বিনামূল্যে পেট ভরে খেয়ে যায় খিচুড়ি, কখনও সুস্বাদু বিরিয়ানি। ফারুকের এই খাবার রান্না ও খাওয়ানোর পুরো চিত্রটি দেখতে হলে যেতে হবে রাজশাহী মহানগরীর গোরহাঙ্গা গোরস্থানের পশ্চিমমুখী ফটকে জানা গেছে,

প্রায় আট বছর ধরেই নিয়মিত এই মানবিক কাজটি করে আসছেন চা-বিক্রেতা ফারুক। তবে শুরুটা হয়েছিল মাত্র দুই কেজি চালের সবজি খিচুড়ি দিয়ে। ওই সময় যতটা সামর্থ্য ছিল তার। এরপর ছিন্নমূলদের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আয়োজনের বাজেটও বাড়ান ফারুক। বর্তমানে দেড় মণ চালের খিচুড়ি রান্না করেন তিনি আর যেদিন অর্থের জোগান বাড়ে সেদিন সুস্বাদু বিরিয়ানি রান্না করেন অসহায়দের জন্য। নিজ হাতে রান্না করা সেই খাবার তুলে দেন ছিন্নমূল মানুষদের মুখে। গেল শুক্রবার জুমার পর গোরস্থানের পশ্চিমমুখী ফটক দিয়ে ঢুকতেই দেখা গেলে একদল মানুষের

হুড়োহুড়ি। তাদের মধ্যে কেউ রিকশাচালক, কেউ ভিক্ষুক, কেউ পথচারী কেউ বা মুসাফির। কারও সাথে কারও কথা নেই। দেখা নেই, সম্পর্ক নেই। শুক্রবার হলেই চলে আসেন এখানে দেখা গেল, গোরহাঙ্গা গোরস্থানের ভেতরে এবং তার পাশের ফুটপাতজুড়ে সারিবদ্ধ হয়ে বসে পড়ছেন অসহায় মানুষেরা। ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি’- কবি সুকান্তের কবিতার বাস্তবচিত্র ফুটে ওঠে সেখানে। জাতপাত, ধর্ম, পেশা সব পরিচয়কে পেছনে রেখে তাদের চেহারায় একই বেদনা দেখতে পাওয়া যায়। এখানে সবার একটাই পরিচয় তারা সবাই ক্ষুধার্ত জানা গেল, মাঝে করোনা সংক্রমণের কারণে কিছুদিন বন্ধ থাকলেও ফারুকের এই মহতী কার্যক্রম চলছে নিয়মিতই, প্রতি শুক্রবার।

দেখা মেলে চা-বিক্রেতা ফারুক হোসেনের। একবেলার খাবার বিলি বণ্টন নিয়ে খুবই ব্যস্ততা তার মাঝে। ফারুককে সহায়তা করতে কবরস্থান ফটকে স্বেচ্ছাশ্রম দিতে এসেছেন কয়েকজন। এমন ব্যস্ততার মাঝেই কাজের ফাঁকে ফাঁকে কথা হয় ফারুক হোসেনের সঙ্গে। এমন উদ্যোগের নেপথ্যে রয়েছে তার ছেলেবেলায় কাটানো অসহায় এক জীবনের গল্প তিনি জানান, কেউই ছিল না তার। একেবারেই নিঃস্ব ছিলেন। দিনের পর দিন পেটে ক্ষুধার জ্বালা নিয়ে কষ্ট করেছেন। তাই খুব ভালোভাবেই বোঝেন ও জানেন ক্ষুধার কষ্ট কেমন। এক পর্যায়ে কোনো পথ না পেয়ে সহায়সম্বলহীন ফারুক আল্লাহর ওপর ভরসা করে খালি হাত-পা নিয়ে নিজ জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছেড়ে কাজের খোঁজে চলে আসেন এই রাজশাহী শহরে