কমবে যানজট, সুবিধা পাবে ৪ কোটি মানুষ

যানজট থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কাজ। এটি বিমানবন্দরের কাওলা প্রান্তে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে মিলিত হবে। ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে সহজ হবে রফতানিযোগ্যপণ্য পরিবহন, সুবিধা পাবে ৩০ জেলার ৪ কোটি মানুষ। এছাড়া এটি চালু হলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-আশুলিয়া

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সাভার, ইপিজেড সংলগ্ন শিল্পাঞ্চল ও ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে সরাসরি সংযুক্ত হবে। তখন ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে রফতানিযোগ্যপণ্য পরিবহন অনেক সহজ ও সাশ্রয়ী হবে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ মনে করে, এ দুটি প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হলে এসব অঞ্চলে রফতানিযোগ্য পণ্য পরিবহনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আসবে। সময়ের পাশাপাশি পরিবহন খরচও হবে সাশ্রয়ী। উন্নত ও দ্রুততর যোগাযোগ ব্যবস্থা সাভার শিল্পাঞ্চলে নতুন নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে। এতে প্রচুর নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। উপকৃত হবে চার কোটি মানুষ
ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি সাভার, আশুলিয়া, নবীনগর ও ইপিজেড সংলগ্ন এলাকার যানজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, যা সেসব এলাকার শিল্প বিকাশে আরও সহায়ক হবে। এ এক্সপ্রেসওয়েটি সাভার ইপিজেড থেকে আশুলিয়া-বাইপাল-আব্দুল্লাহপুর হয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাওলা প্রান্তে নির্মাণাধীন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। এতে দেশের ৩০ জেলার অন্তত চার কোটি মানুষ উপকৃত হবে।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমানে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের অগ্রগতি ৯ শতাংশ। পাঁচ হাজার পাইলের মধ্যে এক হাজার পাইলের কাজ শেষ হয়েছে। তবে সব বাধা কাটিয়ে দ্রুত এগোচ্ছে প্রকল্পের কাজ। ২০২৬ সালের জুন নাগাদ এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়েটির মোট দৈর্ঘ্য ২৪ কিলোমিটার। অন্যদিকে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটির মোট দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। দুটি এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে ৪৩ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। ঢাকা শহরের উত্তরাঞ্চল তথা সাভার, আশুলিয়া, নবীনগর ও ইপিজেড সংলগ্ন শিল্প এলাকার যানজট নিরসন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্রুত উন্নয়নের লক্ষ্যে ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শুরু হয়। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১৬ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। যার ৬৫ শতাংশ অর্থাৎ ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার বা ১০ হাজার ৯৪৯ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে চীনা এক্সিম ব্যাংক।

বাড়বে জিডিপি
ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হলে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২০টি এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ৫ থেকে ৬টি জেলার মানুষ আশুলিয়া-নবীনগর-বাইপাইল হয়ে সহজে এবং দ্রুত ঢাকায় প্রবেশ করতে পারবে। সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ জেলার আনুমানিক চার কোটি মানুষ এ প্রকল্পের সুবিধাভোগী হবে। এতে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি শূন্য দশমিক ২১ শতাংশ বাড়বে বলেও আশা করা হচ্ছে।

কমবে রাজধানীর যানজট
প্রকল্প পরিচালক মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হবে। এভাবে পরিকল্পনা করেই দুটি প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। এ দুটি এক্সপ্রেসওয়ে পুরোপুরি চালু হলে ঢাকা শহরে কোনো ধরনের যানজট বা প্রতিবন্ধকতা তৈরি না করেই পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করবে। এতে আমাদের রফতানি খাতেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। কমবে যানজটও।
এদিকে রাজধানীর যানজট নিরসনে সম্প্রতি বহুল প্রতীক্ষিত দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা ঢাকা উড়াল সড়কের একাংশ যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। গত ২ সেপ্টেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশের এ উড়াল সড়ক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উড়াল সড়কটি বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত যাবে। যার মোট দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। যেখানে প্রথম পর্বে চালু হয়েছে ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার। এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হতে পারে ২০২৪ সালের জুন নাগাদ।