১১:০০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এই সিনেমার শ’ক্তিশালী দিক হলো ইমেজ উপস্থাপন

দী’র্ঘ বিরতির পর হলে গিয়ে দেখলাম মাসুদ হাসান উজ্জ্বল ভাইয়ের সিনেমা ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’। মিরপুরের চিড়িয়াখানা, ঢাকা শহরের বিভিন্ন ফ্লাইওভার, নিউ মার্কেট, কার্জন হল, পুরান ঢাকার দোকানপাট, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, সদরঘাটের টার্মিনাল, বুড়িগঙ্গা — এ চেনা ঢাকা শহরকে নানা রকম কারিগরি দক্ষতায় ভীষণ সুন্দর আর ভালোলাগার মতো করে উপস্থাপন করেছেন নির্মাতা।

মৃণাল সেন যেভাবে কলকাতা শহরকে তাঁর সিনেমায় এনেছেন, ঢাকা শহরকেও তেমন উজ্জ্বল ভাই ডিটেইল-এ দেখানোর চেষ্টা করেছেন।
এর আগে অমিতাভ রেজা চৌধুরীর ‘আয়নাবাজিতে’ও ঢাকা শহরের নিবিড় উপস্থাপন আমরা দেখতে পাই। খুব আত্মবিশ্বাস আর ভালোবাসায় চিত্রায়িত অয়ন আর নীরার ভিড়ের শহর, আমাদের আজন্ম বেড়ে ওঠা ঢাকা।

আর গল্পের কেন্দ্রীয় পুরুষ চরিত্র অয়ন (ইমতিয়াজ বর্ষণ) যেন হয়ে ওঠে মার্ক্সীয় দর্শনে বিশ্বাসী পরিচালকের সাম্যবাদী চিন্তার বাহক। উজ্জ্বল ভাইয়ের প্রত্যেকটি সৃষ্টিতেই প্রলেতারিয়েত সমাজকে উপস্থাপন করার যে দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যায় — সিনেমাটিতেও উঠে এসেছে সেই সমাজ বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষা। অয়ন যেন তারই প্রতিনিধি, যে নিজের জীবনের সর্বস্ব দিয়ে শুধু সাম্যবাদী সমাজেরই স্বপ্ন দেখে। আর নী’রার (শারলিন ফারজানা) চারিত্রিক দৃঢ়তায় উঠে এসেছে আত্মবিশ্বাসী, সংকল্পব’দ্ধ আধুনিক না’রীর পোর্টেট।

তাই নিজের বিয়ে, গবেষণা কিংবা পরবর্তী জীবনে একা থাকার সিদ্ধান্তে সে অটল থাকতে পারে। যুগ যুগ ধরে প্রেম মানুষকে নতুন নতুন ভাবনায় আন্দোলিত করে। নিঃশ্বাসের প্রেম কিংবা বিয়ে সে ক্ষেত্রে হয়তো নতুন কোনো ভালোলাগাকেই প্রতিনিধিত্ব করবে। আর অয়নের সব কিছু মানবের তরে বিলিয়ে দেওয়া বর্তমান স্বার্থপর সমাজের সামনে মানবতার বোধকে অনুপ্রাণিত করবে।

বি’ষয়ের স’ঙ্গে স’ঙ্গে সিনেমার ভাষা নির্মাণেও স্বাতন্ত্র্যের পরিচয় দিয়েছেন চলচ্চিত্র পরিচালক। অসাধারণ সিনেমাটোগ্রাফি, দারুণ কালার গ্রেডিং, অনবদ্য সংলাপ, আলোর পরিমিত ব্যবহার, পোশাক পরিকল্পনা সত্যি অসামান্য। তবে কিছু কিছু জায়গায় সাউন্ডের ব্যবহার হয়তো আরো গুরুত্ব রাখতে পারত।
কাহিনির স্বতঃস্ফূর্ত প্রয়োজনে “ঊনপঞ্চাশ বাতাস”-এ অনিবার্যভাবে যুক্ত হয়েছে কিছু মৌলিক গান, যে গানগুলো দর্শককে কখনো ভাবায়, কখনো ভীষণভাবে কাঁদায়।

এর মধ্যে ‘প্রথম ঝরে”‘ ‘এ শহর’ গান দুটির কথা বিশেষভাবে বলতে চাই। সর্বোপরি এ সিনেমার সবচেয়ে বড় শক্তি অসাধারণ কিছু ইমেজের উপস্থাপন। বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই, ছবির শুরুতেই ধুধু মাঠে ফুলহাতে নীরার পথচলা কিংবা মাটিতে ঢাকা নী’রার সারা শ’রীর, অথচ অনাবৃত মাথা কোথায় যেন গল্পের বেদনাবোধকে প্রতিনিধিত্ব করে (যা ট্রেলারে দেখা যায়)।

এ রকম অসংখ্য চিত্রকল্প এই সিনেমাকে উজ্জ্বল ভাইয়ের সিনেমা হিসেবে চিনিয়ে দেয়। এ ছাড়া উজ্জ্বল ভাইয়ের করা এ ছবির অসামান্য পোস্টারগুলোতেও ভালোবাসার এই শূন্যতা প্রতিবিম্বিত। এ ছবির উল্লেখযোগ্য আরেকটি দিক ভীষণ ক্রাউডকে ধারণ করা। ঢাকা শহরের জনবহুলতা ও ভিড় এ ছবিতে দক্ষতার সঙ্গেই প্রকাশিত হয়েছে।

ছবি চলার পুরোটা সময় আমি ভীষণ ভালোলাগায় আচ্ছন্ন হয়ে ছিলাম। দর্শক আপনাদেরও নিশ্চয়ই খুব ভালো লাগবে। হয়তো একটু দী’র্ঘ লাগতে পারে বা মনে হতে পারে, আরেকটু টান টান হতে পারত। কিন্তু সেটা মনোযোগ নিয়ে বসলে একেবারে মনে হবে না।
আসুন, বন্ধুরা সবাই মিলে বাংলা সিনেমার জয়ধ্বজা উড়াই– হলে গিয়ে সিনেমা দেখি– ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’-এর জন্য শুভ কামনা।

ট্যাগ
জনপ্রিয় সংবাদ

এই সিনেমার শ’ক্তিশালী দিক হলো ইমেজ উপস্থাপন

আপডেট সময়ঃ ০৫:৪২:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৯ নভেম্বর ২০২০

দী’র্ঘ বিরতির পর হলে গিয়ে দেখলাম মাসুদ হাসান উজ্জ্বল ভাইয়ের সিনেমা ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’। মিরপুরের চিড়িয়াখানা, ঢাকা শহরের বিভিন্ন ফ্লাইওভার, নিউ মার্কেট, কার্জন হল, পুরান ঢাকার দোকানপাট, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, সদরঘাটের টার্মিনাল, বুড়িগঙ্গা — এ চেনা ঢাকা শহরকে নানা রকম কারিগরি দক্ষতায় ভীষণ সুন্দর আর ভালোলাগার মতো করে উপস্থাপন করেছেন নির্মাতা।

মৃণাল সেন যেভাবে কলকাতা শহরকে তাঁর সিনেমায় এনেছেন, ঢাকা শহরকেও তেমন উজ্জ্বল ভাই ডিটেইল-এ দেখানোর চেষ্টা করেছেন।
এর আগে অমিতাভ রেজা চৌধুরীর ‘আয়নাবাজিতে’ও ঢাকা শহরের নিবিড় উপস্থাপন আমরা দেখতে পাই। খুব আত্মবিশ্বাস আর ভালোবাসায় চিত্রায়িত অয়ন আর নীরার ভিড়ের শহর, আমাদের আজন্ম বেড়ে ওঠা ঢাকা।

আর গল্পের কেন্দ্রীয় পুরুষ চরিত্র অয়ন (ইমতিয়াজ বর্ষণ) যেন হয়ে ওঠে মার্ক্সীয় দর্শনে বিশ্বাসী পরিচালকের সাম্যবাদী চিন্তার বাহক। উজ্জ্বল ভাইয়ের প্রত্যেকটি সৃষ্টিতেই প্রলেতারিয়েত সমাজকে উপস্থাপন করার যে দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যায় — সিনেমাটিতেও উঠে এসেছে সেই সমাজ বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষা। অয়ন যেন তারই প্রতিনিধি, যে নিজের জীবনের সর্বস্ব দিয়ে শুধু সাম্যবাদী সমাজেরই স্বপ্ন দেখে। আর নী’রার (শারলিন ফারজানা) চারিত্রিক দৃঢ়তায় উঠে এসেছে আত্মবিশ্বাসী, সংকল্পব’দ্ধ আধুনিক না’রীর পোর্টেট।

তাই নিজের বিয়ে, গবেষণা কিংবা পরবর্তী জীবনে একা থাকার সিদ্ধান্তে সে অটল থাকতে পারে। যুগ যুগ ধরে প্রেম মানুষকে নতুন নতুন ভাবনায় আন্দোলিত করে। নিঃশ্বাসের প্রেম কিংবা বিয়ে সে ক্ষেত্রে হয়তো নতুন কোনো ভালোলাগাকেই প্রতিনিধিত্ব করবে। আর অয়নের সব কিছু মানবের তরে বিলিয়ে দেওয়া বর্তমান স্বার্থপর সমাজের সামনে মানবতার বোধকে অনুপ্রাণিত করবে।

বি’ষয়ের স’ঙ্গে স’ঙ্গে সিনেমার ভাষা নির্মাণেও স্বাতন্ত্র্যের পরিচয় দিয়েছেন চলচ্চিত্র পরিচালক। অসাধারণ সিনেমাটোগ্রাফি, দারুণ কালার গ্রেডিং, অনবদ্য সংলাপ, আলোর পরিমিত ব্যবহার, পোশাক পরিকল্পনা সত্যি অসামান্য। তবে কিছু কিছু জায়গায় সাউন্ডের ব্যবহার হয়তো আরো গুরুত্ব রাখতে পারত।
কাহিনির স্বতঃস্ফূর্ত প্রয়োজনে “ঊনপঞ্চাশ বাতাস”-এ অনিবার্যভাবে যুক্ত হয়েছে কিছু মৌলিক গান, যে গানগুলো দর্শককে কখনো ভাবায়, কখনো ভীষণভাবে কাঁদায়।

এর মধ্যে ‘প্রথম ঝরে”‘ ‘এ শহর’ গান দুটির কথা বিশেষভাবে বলতে চাই। সর্বোপরি এ সিনেমার সবচেয়ে বড় শক্তি অসাধারণ কিছু ইমেজের উপস্থাপন। বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই, ছবির শুরুতেই ধুধু মাঠে ফুলহাতে নীরার পথচলা কিংবা মাটিতে ঢাকা নী’রার সারা শ’রীর, অথচ অনাবৃত মাথা কোথায় যেন গল্পের বেদনাবোধকে প্রতিনিধিত্ব করে (যা ট্রেলারে দেখা যায়)।

এ রকম অসংখ্য চিত্রকল্প এই সিনেমাকে উজ্জ্বল ভাইয়ের সিনেমা হিসেবে চিনিয়ে দেয়। এ ছাড়া উজ্জ্বল ভাইয়ের করা এ ছবির অসামান্য পোস্টারগুলোতেও ভালোবাসার এই শূন্যতা প্রতিবিম্বিত। এ ছবির উল্লেখযোগ্য আরেকটি দিক ভীষণ ক্রাউডকে ধারণ করা। ঢাকা শহরের জনবহুলতা ও ভিড় এ ছবিতে দক্ষতার সঙ্গেই প্রকাশিত হয়েছে।

ছবি চলার পুরোটা সময় আমি ভীষণ ভালোলাগায় আচ্ছন্ন হয়ে ছিলাম। দর্শক আপনাদেরও নিশ্চয়ই খুব ভালো লাগবে। হয়তো একটু দী’র্ঘ লাগতে পারে বা মনে হতে পারে, আরেকটু টান টান হতে পারত। কিন্তু সেটা মনোযোগ নিয়ে বসলে একেবারে মনে হবে না।
আসুন, বন্ধুরা সবাই মিলে বাংলা সিনেমার জয়ধ্বজা উড়াই– হলে গিয়ে সিনেমা দেখি– ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’-এর জন্য শুভ কামনা।